Monday, October 9, 2017

জলজ প্রান

চিত্রঃ- ঝরনার জলপান
জঙ্গলের শরীরে স্নিগ্ধতা বয়ে নিয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী, ঝরনা হয়ে পাথরের গা বেয়ে নেমে গেছে সমতলের দিকে। আর এই নদীর বুকেই আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে কিছু জলজ জীব। কাঁকড়া, চিংড়ি, শোল মাছ, আরও রকমারী সব মাছ এবং পোকা। এই জঙ্গলেই একদিন ঝরনার পাশে চিংড়ি এবং কাঁকড়া শিকার করতে বেড়িয়েছিলাম গাড়ির চালক এবং এক সঙ্গীকে নিয়ে। ভেবেছিলাম ঝরনার ধারেই এগুলো পেঁয়াজ, লঙ্কা আর মশলা দিয়ে ঝাল করে রেঁধে লেবুর রস দিয়ে হালকা করে মাখিয়ে খাওয়া যাবে। উপর দিয়ে খুব আলতো স্রোতে জল বয়ে যাচ্ছে আর একটু খাঁজ মতো দেখে একটা পাথর খুঁজে বের করা হলো, তারপর তার উপর গামছা ডুবিয়ে বিছিয়ে দেওয়া হল। পাশেই ভাত আর দেশী মুরগী রান্না করছে আমাদের অন্য সঙ্গীরা, কয়েকটা ভাত নিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হল গামছার উপর। এবার ওই ভাত খেতে চিংড়িগুলো একে একে যেই এসে জমবে ওমনি সুযোগ বুঝে গামছার চারটি কোন আসতে আসতে তুলে নিলেই কেল্লা ফতে, চিংড়ি আমার হাতে। চিংড়ি কয়েকটা ধরলাম, কিন্তু সে দেখতে আজব। হলদেতে কালো রঙ আর গায়ে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ। কি থেকে কি হয় কেউ জানে না, এই চিংড়ি খেয়ে অসুস্থ হলে তখন কে সামলাবে! তাই চিংড়ি ছেড়ে কাঁকড়া ধরা শুরু হল, নদীর কাঁকড়া দারুন সুস্বাদু, গাড়ির চালক এই বিষয়ে বেশ অভ্যস্ত, সে পাথর দেখেই বলে দিচ্ছে কোন পাথরের নীচে কাঁকড়া লুকিয়ে রয়েছে আর হাত ধুকিয়েই ধরে দিচ্ছে। এভাবে অনেকগুলো কাঁকড়া শিকার হলো। একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে সেগুলিকে বন্দী করে রাখা হল। মাংস রান্না হলে তারপর রাঁধা হবে, কিন্তু প্রকৃতি সায় দিল না। আগেই বলেছিলাম সেদিন অর্ধেক রান্নার পর ঝেঁপে বৃষ্টি আর সঙ্গে বজ্রপাত, তাই অগত্যা সময় নষ্ট না করে ওগুলোকে জলে ছেড়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কারণ বৃষ্টি জোড়ে এসে গেলে রাস্তায় ধস নেমে বেরনো মুশকিল হয়ে যাবে। এই জলেই বাস করে রকমারী সব পোকা। জুতো আর মোজা ছেড়ে রেখে ঝরনার জলে একদিন স্নান করেছি, স্নান করে কিছু বুঝিনি, পোশাক পরিবর্তন করে জুতো মোজা পড়ে বাকি স্পটগুলি ঘুরে ফিরে এসেছি হোটেলে। পায়ের আঙুলে একটা অস্বস্তি সকালে স্নান করার পর থেকেই হচ্ছিল তবে গুরুত্ব দিইনি অতটা। সন্ধ্যাবেলা হোটেলরুমে আড্ডার ফাঁকে হঠাৎ পায়ের আঙুলের দিকে চোখ যেতেই দেখি একটা ছোট্ট পোকা, দেখতে অনেকটা মটর কড়াইয়ে যে পোকা থাকে সেরকম, কামড়ে বসে আছে দুটো আঙুলের মাঝে। ভাবলাম এ আর এমন কি, তাড়াতাড়ি করে টেনে সরাতে গিয়ে পায়ের আঙুল দুটোয় বেশ ব্যথা পেলাম, আমার ভুল ভাঙলো। পোকাটা ছয়টা পা আর মুখে স্প্রিং-এর মতো হুলটা আমার শরীরে ঢুকিয়ে আঁকড়ে বসেছিল, আস্তে আস্তে ভিতরেই চলে যেত যদি না চোখে পড়তো। তাকে তো টেনে বেড় করলাম তবে তক্ষুনি কিছু বুঝিনি। একটা রাত কাটানোর পর ধীরে ধীরে ওই দুটি আঙুলের হাড়ে প্রচন্ড ব্যথা। পোকাটা ওভাবে আঁকড়ে বসে হাড়ে হুল ফুটিয়ে হাড়ের রস খেয়েছে। এই প্রকৃতি বেশ রহস্যময়, এখানে কতরকমের জীবের বাস। একটু অসাবধানতায়, বড়ো রকমের ক্ষতি হতে পারে। টিকে থাকতে হলে জঙ্গলের নিয়মই হল তাই, মরো নয়তো মারো, সেটা এই ছোট্ট পোকাটাও শিখে ফেলেছে প্রকৃতির জাদুবলে।

No comments:

Post a Comment